HTML

৫ জি কি? কিভাবে এটি কাজ করে? সবকিছু আপনার জানা উচিত

৫ জি এমন একটি জগত যেখানে সবকিছু ফাস্ট হবে এবং খুব স্মার্ট হবে। ইলেকট্রনিক ডিভাইস একে অপরের সাথে কমিউনিকেট করবে। রোডের মধ্যে যে কার চলে সেগুলো একে অপরের সাথে কথা বলবে। যে কাজগুলো করতে আপনাকে আজকাল কয়েকঘন্টা ব্যয় করতে হয় সেই একই কাজ কয়েক সেকেন্ডে হয়ে যাবে ৫ জি’র সাহায্যে!

জি হ্যাঁ ৫ জি আপনাকে শুধু স্পিডি দেবেনা পাশাপাশি আপনার সারা জীবন পরিবর্তন করে দিবে। ৫ জি সম্পর্কে আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য এবং ৫ জি কিভাবে আপনার জীবনকে পরিবর্তন করবে সে সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক…
বর্তমানে যদি আপনি আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিনের উপরে তাকান তাহলে হয়তো দেখতে পাবেন ৪ জি/৪ জি এলটিই অথবা ৩ জি বা ২ জি দেখতে পাবেন। এই জি (G) এর মানে হচ্ছে জেনারেশন (জেনারেশন অফ ওয়ারলেস নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি)। যত বড় জি ততো বেশি স্পিড পাবেন। বড় মানে সাইজে বড় নয় নাম্বারে বড়। ২ জি এরপরে ৩ জি তারপরে ৪ জি/৪ জি এলটিই।
অনেকদিন আগে ১৯৮০ সালে যখন প্রথম ১ জি এসেছিল তখন মানুষ এর সাহায্যে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারত। ১ জি নেটওয়ার্ক এনালগ রেডিও সিগন্যাল এর মাধ্যমে কাজ করতো এবং এর সাহায্যে আপনি শুধু কল করতে পারতেন।
এরপর আসলো ২ জি, আর আমরা পেলাম জিপিআরএস মানে (গ্লোবাল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস)। এর সাহায্যে ফোনের মধ্যে ইমেইল আসলো এবং স্লো ইন্টারনেট কানেকশন আসলো। এরপরে আসলো ৩ জি। এবং ৩ জি আসার পর থেকে ফোনের মধ্যে ইন্টারনেট কানেকশন এর স্পিড বাড়লো।
আর ৪ জি এর কথা তো আপনার জানাই আছে। ফোরজি আপনার ফোনকে একটি মিনি কম্পিউটারে পরিবর্তন করেছে। কিন্তু ৫ জি এই সবার থেকে আলাদা এবং অনেক এডভান্স।
মোবাইল নেটওয়ার্কিং টেকনোলজিস এর মধ্যে ৫ জি সবচেয়ে বড় জেনারেশন নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি হবে।

৫ জি কী কী পরিবর্তন নিয়ে আসবে


৫ জি কী কী পরিবর্তন নিয়ে আসবে

ফটো: Shutterstock.com

প্রথম যে পরিবর্তন ৫ জি নিয়ে আসবে সেটা হচ্ছে অত্যাধিক স্পিড। কিন্তু কতখানি ফাস্ট? ৪ জি’র তাকে দ্বিগুণ? পাঁচগুণ? ১০ গুণ? নাকি ৫০ গুণ? উত্তর হচ্ছে না! এর মধ্যে কোনটিই নয়। ৫ জি নেটওয়ার্ক ৪ জি’র তুলনায় ১০০ গুণ বেশি স্পিড সম্পন্ন হবে!!! একবার চিন্তা করুন স্পিড সম্পর্কে!
৩ জি তে দুই ঘণ্টার একটি মুভি ডাউনলোড করতে আপনাকে ৫-৬ ঘন্টা ব্যয় করতে হত 😭। ৪ জি তে আপনাকে ৬-৭ মিনিট অপেক্ষা করতে হত (সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক কভারেজে থেকে)। কিন্তু ৫ জি তে আপনি দুই ঘন্টার এইচডি মুভি শুধু মাত্র ৩.৬ সেকেন্ডে ডাউনলোড করতে পারবেন!
তাহলে ইউটিউব অথবা অন্যান্য স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটে আপনি যে বাফারিং এর অসুবিধা ফেস করেন তাকে সারাজীবনের জন্য গুডবাই বলবেন। এখানে আপনি ক্লিক করবেন এবং ওখানে আপনার ভিডিও কিছু মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই প্লে হয়ে যাবে।
৫ জি এর স্পিড আপনার ঘরে লাগানো যে কোন ফাইবার অপটিক ক্যাবল এর থেকে বেশি হবে।
এতখানি পড়ে যদি আপনার মনে হয় এটি ৫ জি এর সবথেকে অ্যামেজিং বৈশিষ্ট্য তাহলে আপনি ভুল। এর থেকেও বড় ফিচার ৫ জি আপনার জন্য নিয়ে আসবে, সেটি হচ্ছে লো লেটেন্সি।
লো লেটেন্সি কি? লো লেটেন্সিকে আপনি রেসপন্স টাইমও বলতে পারেন। আপনার কমান্ড দেওয়ার পরে বা ক্লিক করার পরে নেটওয়ার্ক রেসপন্স করতে কতখানি সময় নেয় তাকে লেটেন্সি বা রেসপন্স টাইম বলা হয়। আপনি যদি ৪ জি নেটওয়ার্কে কোন কমান্ড করেন অথবা ক্লিক করেন তাহলে নেটওয়ার্ক ৫০ থেকে ১০০ মিলি সেকেন্ডের মধ্যে রেসপন্স করে যা আমাদের চোখের পলক এর থেকেও বেশি স্পিড!
হিউম্যান রিয়াকশন টাইম ৩০০ মিলি সেকেন্ড হয়ে থাকে। কিন্তু ৫ জি আপনাকে রেসপন্স করবে মাত্র ১ মিলি সেকেন্ডে। তার মানে হচ্ছে চোখের পলক এর থেকেও ৩০০ গুণ বেশি স্পিডে। এর মানে সবকিছু আপনি রিয়েল টাইমে উপভোগ করতে পারবেন যেকোনো ল্যাগ বা লেটেন্সি ছাড়া!!
লো ল্যাটেন্সি এর সুবিধা কি হবে তা আমি আপনাকে একটি এক্সাম্পল এর সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করছি, কল্পনা করুণ আপনি এবং আপনার আইওটি ফিচারযুক্ত গাড়ি একটি ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে আটকে আছে। সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হবে এবং আপনি চলার জন্য ব্রেক থেকে পা তুলবেন এবং পরবর্তী সেকেন্ডে আপনার গাড়ির ব্রেক অটোমেটিক এপ্লাই হয়ে যাবে এবং গাড়ি থেমে যাবে।
এটা এর জন্য হয়েছে কারণ আপনার গাড়ি বুঝতে পেরেছে আরো একটি গাড়ি সাইট থেকে এপ্রোচ করছে এবং এটি এত ফার্স্ট যে রেড লাইট ভেঙে আগে চলে যাবে। আপনি শুধু ওই গাড়ির স্পিডে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পাবেন এবং আপনার জীবন বেঁচে যাবে।
৫ জি ও লো ল্যাটেন্সি এর সাহায্যে আপনার গাড়ি অন্যান্য গাড়ির ডিরেকশন, স্পিড ব্রেকার জানা ছিল যার কারণে গাড়িটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়াতে সম্ভব হয়েছে। আর এটি শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে লো লেটেন্সি এর কারণে। কারণ এখানে রেসপন্স টাইম অলমোস্ট ১ মিলি সেকেন্ড।
আপনার গাড়ি যদি মোশন সেন্সর অথবা ক্যামেরা যা আজকালের টেকনোলজি ব্যবহার করত তাহলে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটতো।
এমন কি হয়েছে যার কারণে ৫ জি নেটওয়ার্ক এর সাহায্যে আপনার গাড়ি অন্যান্য গাড়ির সাথে কমিউনিকেশন করছে?
কি, ঘটনা পড়ে কি মনে হচ্ছে আপনার কোন সাইন্স ফিকশন মুভি? হ্যাঁ ৫ জি আপনার জীবনকে প্রায় এরকমই বদলে দিবে। ৫ জি এর পরে অটোমেটেড গাড়ি এবং সেলফ ড্রাইভিং কার আসবে। যা একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকবে এবং আপনার জীবন পরিবর্তন করে দেবে।
শুধু একবার কল্পনা করুণ, ১০০ সেলফ ড্রাইভিং কার একসাথে এক রাস্তায় চলছে কোন ট্রাফিক জ্যাম ছাড়া! কারণ এরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড এবং একে অপরের ডিরেকশন, পজিশন জানে। মেশিন আপনার সাথে কথা বলবে এবং আপনার ইশারায় আপনার সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবে!!
৫ জি এর সাহায্যে আপনার রেফ্রিজারেটর আপনার সাথে কথা বলবে, সেলফ ড্রাইভিং ট্রাক আপনার বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসবে এবং ওয়াশিং মেশিন আপনার সাথে কানেক্টেড থাকবে। এই নেটওয়ার্কের জাল শুধুমাত্র আপনার জন্যই হবে? এবং আপনার আপনার জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে তুলবে।
৫ জি এর আরো একটি বড় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেটা হেলথ কেয়ারে সহায়তা করবে। ডাক্তাররা যখন মেশিনের সাথে কানেক্টেড থাকবে এবং রিয়েল-টাইমে কাজ সম্পন্ন করবে তখন এক্সপার্ট সার্জেন্ট রিমোট সার্জারি পারফর্ম করতে পারবে।
মানে ডাক্তার পৃথিবীর এক প্রান্তে এবং রোগি আরেক প্রান্তে থাকবে এবং রোবোটিক আর্ম এর সাহায্যে পেশেন্টের অপারেশন সম্পন্ন হবে। এছাড়াও আপনি রিয়েল-টাইমে অনলাইন গেইমিং করতে পারবেন এবং ভিআর (VR) এর সাহায্যে সবকিছু এক্সপেরিয়েন্স করতে পারবেন। কিন্তু এতসব কিভাবে সম্ভব হবে?

৫ জি এত ফাস্ট কিভাবে?


৫ জি এতটা ফাস্ট কিভাবে?

ফটো: TechJaja.com

৫ জি এর স্পিড এবং লো ল্যাটেন্সি এর কারন হচ্ছে মিলিমিটার ওয়েবস! মিলিমিটার ওয়েভ হ’ল ৩০ গিগাহার্টজ থেকে ৩০০ গিগাহার্টের মধ্যে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি।
আপনার স্মার্টফোন অথবা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির সাহায্যে স্পেসিফিক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। এবং এই ফ্রিকোয়েন্সি ৬ গিগাহার্জ এর ভিতরে থাকে।
কিন্তু যখন অনেকগুলি স্মার্টফোন একসাথে কানেক্টেড হয় তখন এই ফ্রিকোয়েন্সি স্লো হয়ে যায়। তাই আপনার সার্ভিস প্রোভাইডার ফ্রিকুয়েন্সিতে লিমিটেড ডাটা প্রোভাইড করে এর কারণে যখন বেশি মানুষ একসাথে কানেক্টেড হয়ে যায় তখন নেটওয়ার্ক স্লো হয়ে যায়।
অথবা রাত যখন কম মানুষ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তখন স্পিড বেশি হয়ে। যায় সমস্যা সমাধান হবে মিলিমিটার ওয়েবস এর মাধ্যমে।
মিলিমিটার ওয়েবস ৬ গিগাহার্জ জায়গার পরিবর্তে ৩০ থেকে ৩০০ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করবে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র রেডার্স সিস্টেম এবং স্যাটেলাইটে মিলিমিটার ওয়েবস এর ব্যবহার হচ্ছে।
৪ জি তে ৫০০ স্কয়ার কিলোমিটার এর ভিতর এরাউন্ড ১০ লাখ ডিভাইস কানেক্টেড হতে পারে কিন্তু ৫ জি তে ১ স্কয়ার কিলোমিটার এ ১০ লাখ ডিভাইস কানেক্ট হতে পারবে।
মিলিমিটার ওয়েবস আপনাকে স্পিড, কানেকটিভিটি এবং লো ল্যাটেন্সি প্রোভাইড করছে কিন্তু এতে কিছু সমস্যা আছে 😭
মিলিমিটার ওয়েব বেশি দূর পর্যন্ত ট্রাভেল করতে পারে না। মানে যদি কোন অবসটিক এর মধ্যে ঢুকে পরে তাহলে ঠিকমতো কানেক্টিভিটি অফার করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ঘর থেকে ৬০০ মিটার দূরে কোন ৫ জি বক্স লাগানো থাকে তাহলে আপনার ৫ জি কানেক্টিভিটি মিলবে না।
কারণ মিলিমিটার ওয়েবস এর রেঞ্জ এরাউন্ড ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার হয়ে থাকে। ফলসরূপ বৃষ্টিতেও মিলিমিটার ওয়েবস ঠিকমতো কানেক্টিভিটি প্রভাইড করতে পারবে না। তাই ৫ জি কে প্রতি কোনায় কোনায় পৌঁছানোর জন্য (মিলিমিটার ওয়েবস এর জন্য) নতুন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর প্রয়োজন হবে।
এবং কানেক্টিভিটির জন্য একটি ছোট্ট জায়গায় এমনকি প্রতি বিল্ডিনেও ৫ জি বক্স লাগাতে হতে পারে। মিলিমিটার ওয়েবসকে কিভাবে আপনার কাছে পৌঁছানো যায় সে সম্পর্কে এখনও কাজ চলছে। তাই ৫ জি নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য হয়ত আপনাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।



Post a Comment

0 Comments