আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলেই ভালো আছেন আল্লাহর রহমতে।
বয়ানঃ- মাওলানা তারিক জামিল দাঃবাঃট্রান্সলেটঃ- উর্দু থেকে বাংলা
লিখছেনঃ মো: সাকিব রায়হান (নিস্তব্দ)
(লেখার ভিতরে ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। অবশ্য লেখাটি সর্বপ্রথম ট্রিকবিডিতে করেছিলাম কিন্তু পাবলিশ হয়নি)
যিনি সমস্ত উন্মতের জন্য কাঁদতে,, কাঁদতে,, কাঁদতে দুনিয়া থেকে চলে গেলেন। আর এত কেঁদেছেন যা আর কোনো নবী কাঁদেনি। এত ছটফট করেছেন যা আর কোনো নবী ছটফট করেনি। যে, তাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য হাজার বার আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল (আঃ) কে পাঠিয়েছেন,, আল-কুরআন পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলতেছেন, “ আপনি কেন এত চিন্তা করেন? “
“ আপনি কেন এত কাঁদেন? “
যার মধ্যে আল্লাহ বলেছেন, ” হে আমার হাবিব আপনি এত চিন্তা করবেন না। ” তার পরেও এত পরিমাণ চিন্তিত নিজের উম্মতের জন্য।
যখন এমন মুসলমান যারা কবিরা গুণাহ করতে করতে মারা গেছে,, মদ খেয়ে,, জুয়া খেলে,, নামায ছেড়ে দিয়ে,, যিনা করতে করতে করতে যারা মারা গেছে তো এই আল্লাহর রাসূল আমাদের জন্য কেঁদেছেন। যখন রাসূল কিয়ামতের দিন আমাদের সমস্ত নাফরমানি দেখবেন। তখন তিনি বলবেন, ” হে আল্লাহ এই হলো আমার উম্মত। যারা কুরআন ছেড়ে দিয়েছিলো। কুরআন ডাক দিয়েছিলো মসজিদে আসো। এরা মসজিদের রাস্তা ছেড়ে দিয়েছিলো। আমাকে বলো এখানে এত মানুষ কোথা থেকে আসলো? এদের ভিতর এক-তৃতীয়র একভাগ বাইরের মানুষ হবে। বাকি দুইভাগ মানুষ সবাই এলাকার/মহল্লার। তাহলে কেন এদের কদম বাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে কেন পড়ে না। এরা কোথাই চলে যায়?“
– এরা কি আল্লাহর জমিনে অন্যান্যদিন থাকে না ??
– এরা কি শুধু সপ্তাহে এক দিন আল্লাহর রিযিক ভক্ষণ করে ??
– এরা কি শুধু সপ্তাহে এক দিন আল্লাহর পানি পান করে ?? এরা কোথাই চলে যায় ??
— এরা কি আল্লাহর জমিনে অন্যান্যদিন থাকে না ??
— এরা কি শুধু সপ্তাহে একদিন আল্লাহর রিযিক ভক্ষণ করে ??
— এরা কি সপ্তাহে একদিন আল্লাহর পানি পান করে ??
– এরা কি সপ্তাহে একদিন আল্লাহর বাতাস নিজের দেহের ভিতরে গ্রহন করে ??
– এরা কি সপ্তাহে একদিন আল্লাহর দেয়া নূর/চোখ দিয়ে দেখে ??
– এরা কি সপ্তাহে একদিন নিজের কান দ্বারা শ্রবন করে ??
– এরা কি সপ্তাহে একদিন মাত্র নিজের শরীর দ্বারা উপকার লাভ করে ??
– এরা কি সপ্তাহে একদিন সূর্যের আলো দ্বারা উপকার লাভ করে ??
– এরা কি সপ্তাহে একদিন মাত্র নিজের পরিবারে সাথে সময় দেয় ??
এই পাথরের মত শক্ত হৃদয়টার কি হয়েছে? কেন এর দুয়ারে আওয়াজ যায় না? কেন এরা নিশ্ব হয়ে গেছে? এমন শক্ত তো পাথরও হয় না।
আতাউল্লাহ শাহ বুখারি বলেন, ” হে হিন্দুস্তান বাসী, আমি তোমাদের এত কুরআন শুনালাম। আমি যদি পাথরকে শুনাতাম তাহলে পাথর মোম হয়ে যেত। আমি যদি সমুদ্রকে শুনাতাম তাহলে তুফান থেমে যেত। আমি জানিনা তোমরা কেমন মানুষ! কোন জিনিস দ্বারা তৈরী? তোমাদের দেহের ভিতরে হৃদয় নেই পাথর আছে। পাথর না বরং তার চেয়েও শক্ত কিছু। পাথরও আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর ভরে কাপতে থাকে। আর তোমরা কেমন মানুষ। কেমন হৃদয় নিজেদের দেহের ভিতরে রাখো? যে, দিনে পাঁচ বার এত বড় সারা জাহানের বাদশা তোমাদের ডাকেন আর তোমরা তার ডাকে সাঁড়া দাও না।
.
.
– حَيَّ عَلَي الصَّلوةِ
– حَيَّ عَلَي الصَّلوةِ
[ হাইয়্যা আলাস সালাহ || হাইয়্যা আলাস সালাহ ]
যদি ডি.সি বা মন্ত্রী ডাকে, তোমরা তোমাদের কাজ ছেড়ে দৌড় দাও। আর তোমার আমার জমিন আসমানের বাদশা দিনে পাঁচবার ডাকে। তোমরা কানের ভিতরে তুলা দিয়ে রাখো আর জুম্মার দিন মসজিদে আসো।
– শুধু কি জুম্মার দিনই খাবার খেয়েছো ??
– শুধু কি জুম্মার দিনই পানি পান করেছো ??
– শুধু কি জুম্মার দিনই ঘুম থেকে উঠেছো ??
এমন নাফারমানি তোমরা নিজেদের সাথে করতে,, শয়তানের সাথে করতে,, দেশ বা সম্পদের সাথে করতে। এই নাফারমানি শুধু আল্লাহর সাথে কেন ??
যেই জমিনে পবিত্র সেজদা না করা হয় এর চাইতে বড় কোনো জুলুম/গুনাহ হতে পারে না।
★ যিনা করা গুনাহ মনে করো অথচ নামায না পড়া যিনার চাইতেও বড় গুনাহ।
★ সুদ-ঘুষ খাওয়া গুনাহ মনে করো অথচ নামায না পড়া তার চাইতেও বড় গুনাহ।
★ হত্যা করা বড় গুনাহ মনে করো অথচ নামায ছেড়ে দেওয়া হত্যার চাইতেও বড় গুনাহ।
শয়তান তো শুধু মাত্র সিজদা করতে অস্বীকার করেছিলো। শয়তান কি যিনা করেছিলো? ঘুষ খেয়েছিলো? হত্যা করেছিলো? শিরক করেছিলোয়? কি করেছিলো মাত্র একটা সিজদা করতে অস্বীকার করেছিলো। মাত্র একটা সিজদা অস্বীকার করে সে সারা জনমের জন্য মারদুদ শয়তান হয়ে গেছে। — ঐ মুসলমানের হুশ নেই যে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সিজদা অস্বীকার করে বসে আছে ??
তারপর আরাম করে খাবার খায়। চা পান করে। হাসি-ঠাট্টা করে। স্ত্রীর কাছে সময় কাটায়। একটা মাত্র সিজদার অস্বীকার করে শয়তান সারা জনমের জন্য মারদুদ হয়ে গেলো।
ফজরে ডাক দিলো (ঘুম থেকে নামায উত্তম) সিজদা অস্বীকার করলো। তারপর যোহরের সিজদা অস্বীকার করলো। আছরের সিজদা এরপর মাগরীব ও এশার সিজদা অস্বীকার করলো। যে এতগুলো সিজদাহ অস্বীকার করলো সে কি ভয় পায় না যে, আল্লাহ যদি তাকে শয়তান মারদুদ বানিয়ে দেয়।
তো কি হবে ঐদিন? কি বাহান/অযুহাত পেশ করবে যে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি, আসতে পারিনি, গরম লাগছিলো, শীত পড়ছিলো, অনেক অন্ধকার ছিলো।
– ঐ কবরের অন্ধকারের কথা কি মনে নেই??
– কবরের গরমের কথা কি মনে নেই?
– জাহান্নামের আগুনের কথা কি ভুলে গেলে?
– জাহান্নামের আযাবের কথা ভুলে গেলে?
– জান্নাতের সুখের নেয়ামতের কথা কি ভুলে গেলে?
– আল্লাহর কুরআনকে কি ভুলে গেলে?
– আল্লাহ তোমাকে আমাকে দেখছেন সেই কথা কি ভুলে গেলে?
– ঐ আল্লাহর সাথে কিয়ামতের ময়দানে দেখা হবে সেই কথা কি ভুলে গেলে?
— এটা কেমন ইসলাম ??
এটা কেমন পাথর হৃদয় যে টাকা রোজগারের সময় হুশ থাকে। আর যখন সমস্ত দুনিয়ার ও আখিরাতের বাদশা তোমাকে ডাকলেন তখন বৃদ্ধার হুশ এলো না,, যুবকের হুশ এলো না,, নারীর হুশ এলো না। দিন-রাত প্রত্যেকটা সময় আমরা আল্লাহর সাথে নাফরমানি করছি।
— আল্লাহ কি শুধু জুম্মার দিন ডাকেন ??
জুম্মার দিন মসজিদে এত লোক কেন আসে ?? অন্যদিনে কেন আসে না ??
জমিন বলে, ” ইয়া আল্লাহ হুকুম দেন আমি এদের গিলে ফেলি। ”
সমুদ্র বলে, ” ইয়া আল্লাহ হুকুম দেন আমি এদের উপরে চলে যায়। ”
ফেরশতারা বলে, ” ইয়া আল্লাহ হুকুম দেন এদের ধ্বংস করে দেই। ”
আর যার সিজদার অস্বীকার করা হলে সেই বাদশা বলেন, “ এদের আমি সৃষ্টি করেছি,, মাটি দিয়ে আর দয়া দ্বারা সৃষ্টি করেছি। আমার খাবার খেয়ে জীবিত থেকে,, আমার পানি পান করে জীবিত থেকে,, আমার বাতাস দ্বারা জীবিত থেকে,, আমার দেয়া গোস্ত থেকে জীবিত থেকে। এরা আমারই নাফরমান হয়ে গেলো !! “
১৫০০ টাকা বেতন পাওয়া একজন কর্মচারী যদি আপনাকে চায়ের কাপ না দেয় তাহলে আপনি বলেন যাও যাও চলে যাও। অন্য কাউকে চাকরীতে রাখবো। আর যে এত বড় নেয়ামত দান করলো তাকে আমরা কিভাবে ভুলে যায়!! যে,
– চোখের মধ্যে আলো দান করলো।
– কানের ভিতরে শ্রবন শক্তি দান করলো।
– সমস্ত শরীরের ভিতর রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করলো।
– অন্ধকার দেহের ভিতরে হৃদপিন্ড বসালো।
– মাথার ভিতরে থাকা ব্রেনের ভিতর বুদ্ধি দান করলো।
– দেহের প্রতিটা হাড্ডি/হাড়কে খাবার দিলো।
– চোখকে খাবার দিলো।
– চুলকে খাবার দিলো।
– দাঁতকে কোনো কিছু কাঁটার শক্তি দান করলো।
– মুখে কথা বলার শক্তি দান করলো।
.
.
আজ সেই আল্লাহর সাথে নাফরমানি ??
আজ এখানেই শেষ ইনসাআল্লাহ ফিরবো নতুন কিছু নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।টেলিগ্রামেঃ MD Shakib Rayhan Nisstobdho
0 Comments