HTML

পড়ালেখা কেন করবেন? জেনে নিন এখনই।

আমরা আমাদের ছোটবেলায় শুনতাম পড়ালেখা করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে। আর দুষ্টু ছেলের ফাঁকি দেয়ার জন্য বলতো পড়ালেখা করে যে গাড়ি চাপা পড়ে সে। আজ বড় হয়ে দেখছি শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই গাড়ি চাপা পড়ে। আর শিক্ষিতরা গাড়ি কিনে যেসব গাড়িতে চড়ে ঠিক তেমনি লেখাপড়া না জানা মাস্তানরা নানাভাবে গাড়ি হাঁকায়। এতে কি আমরা হতাশ হবো? না কক্ষনোই না। কারন আমরা জানি মাস্তানরা গাড়ি চালালেও তারা মানুষের ভালোবাসা পায় না, এমনকি অনেকক্ষেত্রে নিজের পিতামাতারও না। তবে একটা জিনিস তারা সবসময় বেশি পায়, সেটি হলো ঘৃণা। কাজেই আমরা লেখাপড়া করবো শুধু গাড়িতে চড়ার জন্যই নয়- বরং বড় অনেক বড় মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্যে। স্বয়ং বিশ্বেস্রষ্টা আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা) এর কাছে সর্বপ্রথম এ আসমানি নির্দেশটি পাঠালেন, আপনারা জানেন সেই মহান গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি ছিলো? সেই পবিত্রতম বাণীটি ছিল- ‘ইক্করা’ মানে ‘পড়’। আপনারা কি জানেন কেন আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত- অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়? সে এক মজার কাহিনী। হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টির পরপরই একটি চমৎকার প্রতিযোগিতা হয়েছিল। একদিকে সকল ফেরেশতা, অপর দিকে হযরত আদম (আ) একা। আল্লাহ ছিলেন প্রধান বিচারক। প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ছিল ‘ঙ্গান’। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ) সে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন বলেই আমরা আশরাফুল মাখলুকাত খেতাব পেয়েছি।
রাসূল (সা) ঙ্গান অর্জনের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ঙ্গানার্জন করো’। এর আগে পরে কোনো সময় ঙ্গান অর্জন থেকে বাদ দেয়া যায় কি? ঙ্গানের শক্তিতেই একদিন মুসলমানেরা সারা পৃথিবীকে শাসন করেছে। ১২৫০ সালে স্পেনের টেলেডোতে আজকের সভ্য ইউরোপের শিক্ষক মুসলমানেরা প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র school of oriental studies স্থাপন করেন। যেখানে সব সময় ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় দশ হাজার ছাত্র অধ্যায়ন করতো। যার ব্যাপারে যোশেফ হেলের মন্তব্য হলোঃ cordova shone like light house on the darkness of Europe. আমি সেই সময়ের কথা বলছি যখন ইউরোপ খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটি ছিল রাণী ইসাবেলার যাতে বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০১ টি। অপর দিকে তৎকালীন ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কায়রোতে মুসলমানদের পাঠাগারে জমা ছিল প্রায় ১০ লক্ষ বই। ঠিক সেই সময় অসভ্য ইউরোপে মুসলমানদেরই আবিষ্কার পৃথিবী গোল বলার অপরাধে মিঃ ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়, গ্যালিলিওকে বিঙ্গান প্রচারের অপরাধে কারাগারে আটক করা হয়। কাগজ, ঘড়ি, বারুদ, মানচিত্র, ইউরোপ থেকে ভারতের রাস্তা এমনকি আমেরিকার আবিষ্কর্তা মুসলমানেরা। দুর্ভাগ্য আজকে তারাই সবচেয়ে পশ্চাৎপদ জাতি। কারণ একসময় পৃথিবীর শিক্ষক হলেও আজকে তারাই সবচেয়ে কম লেখাপড়া করে। অথচ রাসূল (সা)বলেছেন- ঙ্গান হলো মুসলমানদের হরানো সম্পদ। সুতরাং বড় হতে হলে, এ বিশ্বটাকে আবার জয় করতে হলে অনেক অ-নে-ক বেশি লেখাপড়া করতে হবে। মুসলিম ছাড়াও এবিশ্বে যারাই বড় হয়েছেন তারাই প্রচুর লেখাপড়া করে বড় হয়েছেন। যিনি দারিদ্রতার কারনে ঘড়ি বিক্রি করে দিয়ে দিনে আধপেট খেয়ে, সারাদিন লাইব্রেরিতে পড়ে থাকতেনে। তিনিই পরবর্তিকালে রূপকথাকেউ ছাড়িয়ে গিয়ে জগৎ বিখ্যাত নেপোলিয়ান হয়েছিলেন। হেলেন কিলার ছিলেন সম্পুর্ণ অন্ধ; কিন্তু চক্ষুষ্মান অনেক অনেক লোকের চাইতেও তিনি অধিক সংখ্যক বই পড়েছিলেন। সাধারনের চাইতে কমপক্ষে একশ গুণ এবং নিজেই লিখেছেন প্রায় এগারোটি গ্রন্থ। আর নোবেল বিজয়ী বার্নার্ডশ, দারিদ্রতার কারণে মাত্র পাঁচ বছর স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনিই ছিলেন বিশ্বে তার যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তিনি মাত্র সাত বছর বয়সে শেকসপিয়র, বুনিয়ান, আলিফ লায়লা, বাইবেল প্রভৃতি অমর গ্রন্থ শেষ করেন আর বারো বছর বয়সেই ডিকেন্স, শেলীর বইগুলি হজম করে ফেলেন। আমরাও যদি বড় হতে চাই লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নাই। আমাদের উপমহাদেশেও যে সকল ব্যক্তিত্বকে মানুষ সর্বদা স্মরণ করে তারা সকলেই ছিলেন মহাঙ্গানী আর সুউচ্চ ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ। আল্লামা ড. ইকবাল মাত্র বিশ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।কায়েদে আজম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ব্যারিস্টার হন। ভারতের জনক মহাত্মা গান্ধী, প্রথম প্রধান মন্ত্রী নেহেরু ব্যারিস্টার ছিলেন। বিঙ্গানী আইনস্টাইন, আমাদের নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তারাও তাদের সময়ের বিখ্যাত শিক্ষাবিদ, আইনবিদ ও ব্যারিস্টার ছিলেন। একজন মহান ব্যক্তির কথা। তিনি যখন অসহায় ভাবে রাশিয়ার এক রেলস্টেশনে মারা যান তখন তার ওভার কোটের পকেটে পাওয়া যায় মূল্যবান এক বই ‘দ্যা সেইং অব প্রোফেট মোহাম্মদ’। সেই নোবেল বিজয়ী লিও টলস্টয়কে বলা হয়েছিল জাতীয় উন্নয়নের জন্য আপনি যুব সমাজের জন্য কিছু বলুন। তিনি বলেছিলেন, আমার তিনটি পরামর্শ রয়েছেঃ
১. পড়
২. পড়
৩. আর পড়।
এটি যেন মহান আল্লাহর সেই প্রথম বাণী ‘পড় তোমার প্রভুর নামে’ এরই প্রতিফলন। তাই বড় হতে গেলে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই।
তাহলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আমাকে মনেরাখুন আর wizbd এর সাথেই থাকুন। আসসালামুআলাইকুম।
সময় পেলে আমার সাইটে একবার ভিজিট করে আসবেন। ধন্যবাদ।



Post a Comment

0 Comments